শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৪ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নবীগঞ্জে এক শিশু ধর্ষণের বিচার দাবিতে তার সহপাঠী কয়েকশ’ শিশু মানববন্ধন করেছে। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর দেড়টার দিকে জেলার বাহুবল উপজেলার সীমান্তবর্তী নবীগঞ্জ উপজেলার শংকরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্মুখস্থ রাস্তায় বিদ্যালয় ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। গত ২০ মার্চ ওই বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির ছাত্রী নবীগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামের জনৈক কৃষকের কন্যা (৮) কে একই গ্রামের আব্দুল ওয়াহিদ-এর পুত্র জাকারিয়া (১৮) জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ২৬ মার্চ ধর্ষিতা শিশুর মা (রাজিয়া আক্তার) বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করলেও পুলিশ ধর্ষককে গ্রেফতার করতে পারেনি।
এলাকাবাসী ও সহপাঠীরা জানায়, শংকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির মেধাবী ওই ছাত্রীর পিতা একজন কৃষক। তিনি কৃষিকাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তার পিতা বাড়িতে না থাকলে ওই ছাত্রীই নিকটবর্তী হাওরে চড়ানো গরু-বাছুর বাড়িতে নিয়ে আসেন। গত ২০ মার্চ বিকেলে পিতা বাড়িতে না থাকায় মা তাকে গরু আনতে বাড়ির পশ্চিমে মাঝের কান্দি হাওরে ওই ছাত্রীকে পাঠান। সেখানে তাকে একা পেয়ে উপজেলার আলীপুর গ্রামের আব্দুল ওয়াহিদ-এর পুত্র জাকারিয়া তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। একই গ্রামের আব্দুল জলিল নামক জনৈক ব্যক্তি দূর থেকে ঘটনা দেখে এগিয়ে এলে ধর্ষক পালিয়ে যায়। সাথে সাথে আব্দুল জলিল ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে এলে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ওসিসিতে ভর্তি করা হয়।
ধর্ষিতার মা বলেন, পৃথিবীকে চেনার আগেই আমার মেয়ের উপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেছে, সে তাণ্ডব কাটিয়ে আমার মেয়ে জীবনে কোন দিন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে কি না জানি না। তবে এখন আমার মেয়ে স্কুলে আসা তো দূরের কথা ঘর থেকে বের হতেও চায় না। লোকজন দেখলেই সে ঘরের কোণে লোকিয়ে থাকে। তিনি আরো বলেন, আমার মেয়ে এক ঘরেও থাকতে চায় না। সর্বদা সে ভয় পায়। ধর্ষিতার মা অভিযোগ করে বলেন, আসামী পক্ষ মামলা তোলে নেয়ার জন্য নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। আমাকেসহ আমার মেয়েকে বাড়ি থেকে তোলে নেবে বলেও প্রচার করছে। তিনি আরো বলেন, আমার মেয়েকে যে লম্পট এমন পরিস্থিতিতে ফেলেছে আমি তার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।
মানববন্ধনে অংশগ্রহকারীরাও মানববন্ধনে ধর্ষকের ফাঁসির দাবিতে শ্লোগান দেয়।
শংকরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শ্যামল দাশ মলিক বলেন, আমাদের আশপাশে অনেক অপকর্মই ঘটে কিন্তু এ ছাত্রী সাথে ঘটনাটি শুনার সাথে সাথে শরীরের লোমগুলো দাঁড়িয়ে যায়। আমরা ঘৃণ্য এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
প্রধান শিক্ষক মনোহর রায় বলেন, ২য় শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী ধর্ষণের স্বীকার হয়ে আজ বিদ্যালয় ছাড়া। একাধিক বার তাকে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসার জন্য পরিবারের লোকজনের সাথে যোগাযোগ করে তাকে বিদ্যালয়মূখী করা যায়নি। আমরা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রীরা ধর্ষক জাকারিয়ার অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করে শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
সহকারি শিক্ষক কয়েস মিয়া বলেন, আমরা শিশু ধর্ষিতার চাচা চলুক মিয়ার মাধ্যমে প্রথমে বিষয়টি জানতে পারি। পরে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের রিপোর্ট দেখে বিষয়টির সত্যতা পাই। তিনি প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা লম্পট জাকারিয়াকে আইনের আওতায় এনে এমন শাস্তি দিবেন যাতে পরবর্তীতে আর কোন লম্পট এমন নেক্কারজনক কাজে জড়াতে সাহস না পায়।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) গোলাম দস্তগীর বলেন, মামলাটি তদন্ত করছেন গোপলারবাজার তদন্ত কেন্দ্রের ইন্সপেক্টর কাউসার আলম। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামী গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।